খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বিমসটেক সম্মেলনে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
  মাদারীপুরে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৪ যুবক নিহত

শোলাকিয়া জনসমুদ্র, রেকর্ড সাত লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

গেজেট ডেস্ক

কয়েকদিন ধরেই কিশোরগঞ্জে তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছিলো। তাপমাত্রা ছিলো ৩৬-৩৭ ডিগ্রির ঘরে। ফলে ঈদের দিন দাবদাহ আরো বাড়ার আশঙ্কা ছিলো। ঈদের আগের দিন রোববার তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রিতে পৌঁছালে সেই আশঙ্কাকে আরো ঘনীভূত করে। কিন্তু ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) ভোর থেকেই কমতে থাকে তাপমাত্রা। মিষ্টি রোদ আর বসন্ত বাতাসের মেলবন্ধনে মনোরম ও স্নিগ্ধ এক সকাল দেখে শোলাকিয়া। প্রকৃতির এই নিবিড় আতিথেয়তা নিয়ে শোলাকিয়া অভিমুখে ঢল নামে মুসল্লিদের।

জামাত শুরু হওয়ার অন্তত দেড় ঘন্টা আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় প্রায় ৭ একর আয়তনের শোলাকিয়া ময়দান। মিষ্টি রোদে স্নাত হয়ে শোলাকিয়ার সবুজ ঘাসে জায়নামাজ ও পলিথিন বিছিয়ে জামাতের জন্য জায়গা করে নেন লাখো মুসল্লি। তখনো শোলাকিয়ার পথে পথে মুসল্লিদের স্রোত। ঈদগাহ ময়দানে জায়গা না পেয়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পাশের সড়ক, পুকুরপাড়, নরসুন্দা নদীর তীর, শোলাকিয়া সেতু, আশপাশের এলাকা ও সড়ক এবং বাসাবাড়ির ছাদ ও উঠানে। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ছাড়িয়ে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব তিন পাশেই ছিলো মুসল্লিদের ভিড়। কোথাও যেনো ছিলো না তিল ধারণের ঠাঁই। এরপরও মুসল্লিদের মাঝে ছিলো না কোনো অস্বস্তি। সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় যখন এবারের ১৯৮তম জামাত শুরু হয়, তখনও চলছিল ঈদগাহমুখী মুসল্লিদের ঢল। মহান রবের রহমত কামনা যেনো ব্যাকুল করে তুলে মুসল্লিদের। শোলাকিয়া ময়দানে এত বিপুল সংখ্যক মুসল্লির সমাগম ছিলো এক অভূতপূর্ব ঘটনা। লাখো কণ্ঠের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শোলাকিয়া ঈদগাহ এলাকা। জামাত শুরুর সময়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আল্লাহর সান্নিধ্য ও অনুকম্পা পেতে ব্যাকুল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। রোদে পুড়েই তাঁরা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। মুসল্লিদের দাবি, এবার অন্তত সাত লাখ মুসল্লি শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে অংশ নিয়েছেন।

প্রতিবারের মতো এবারও শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন। দেশের সর্ববৃহৎ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের উদ্দেশ্যে। ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে আসা দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। সকাল ১০টায় রেকর্ড সাত লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে জামাত শুরু হওয়ার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী ১৫, ৫ ও ১ মিনিট আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে নামাজের প্রস্তুতির সংকেত দেওয়া হয়। ফ্যাসিবাদী জামানায় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ইমাম হিসেবে ইসলাহুল মুসলিহীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাও. ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দায়িত্ব পালন করলেও এবার মুতাওয়াল্লী নিযুক্ত স্থায়ী ইমাম শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করা হয়।

এছাড়া বিকল্প ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদ্রাসার আরবী তাফসির বিভাগের প্রভাষক জোবায়ের ইবনে আব্দুল হাই। জামাত শুরুর আগে গ্র্যান্ড ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ এবং বিকল্প ইমাম জোবায়ের ইবনে আব্দুল হাই বয়ান করেন। জামাতে ইমামতি করেন গ্র্যান্ড ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। জামাত শেষে ইমাম তাঁর বয়ানে শোলাকিয়া ময়দানের প্রয়াত মুসল্লিদের ও ফিলিস্তিনে নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য মুসল্লিদের জন্য দোয়া ও দেশের শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মুসলমান, আরাকানের মুসলমান, ছেছনিয়ার মুসলমান, মধ্য আফ্রিকার মুসলমান এবং ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানদের দুরবস্থার পরিত্রাণ কামনা করে তিনি বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অটুট থাকা এবং পাপ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন তিনি। এ সময় লাখো মুসল্লির উচ্চকিত হাত আর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার আমীন, আমীন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ঈদগাহ এলাকা।

১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম বড় জামাতের হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ময়দানে এবার ছিল ১৯৮তম ঈদ জামাত। জামাতকে কেন্দ্র করে এবার নেওয়া হয় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে স্থাপন করা হয় ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। ৬৬টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয় ঈদগাহ ময়দান, আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশ। পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় এবারো যুক্ত ছিল ড্রোন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শোলাকিয়ার ঈদজামাতকে ঘিরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র‌্যাব এবং পুলিশের ১১০০ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারের মতো সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ ময়দানে। এর আগে আরো অন্তত কয়েক দফা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাসি করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের শুধু জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন নিয়ে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়া হয়।

মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে ঈদের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্রগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে। এদের অনেকে ওঠেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। আবার অনেকেই কোথাও জায়গা না পেয়ে রাত কাটান জেলা সদরের বিভিন্ন মসজিদে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!